৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমালে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে: গবেষণা যা যানা গেল


অতিরিক্ত ঘুম কি আপনার জীবন কেড়ে নিচ্ছে? সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, প্রতিদিন ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমালে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৪% পর্যন্ত বেড়ে যায়। তবে এর পেছনে আসল কারণ কী? অতিরিক্ত ঘুমের কারণে কী কী রোগ হতে পারে এবং কীভাবে এর থেকে মুক্তি পাবেন, তা জানতে পড়ুন এই বিস্তারিত প্রতিবেদন।

ভূমিকা

ঘুম আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। সুস্থ শরীর ও সতেজ মনের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি। চিকিৎসকেরাও সবসময় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের পরামর্শ দেন। কিন্তু জানেন কি, কম ঘুমানোর চেয়েও বেশি ঘুম আপনার স্বাস্থ্যের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে? সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, যারা প্রতিদিন ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। তবে কি অতিরিক্ত ঘুমই মৃত্যুর কারণ, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? চলুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

অতিরিক্ত ঘুম: কেন এবং কীভাবে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?

আপনি হয়তো ভাবছেন, বেশি ঘুমালে ক্ষতি কী? এতে তো শরীর বিশ্রাম পায়। কিন্তু গবেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা এবং আরও ৭৯টি গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যারা রাতে ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৪% পর্যন্ত বেশি। এর কারণ হিসেবে গবেষকরা কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন:

  • অতিরিক্ত ঘুমের সঙ্গে রোগের সম্পর্ক: অতিরিক্ত ঘুম সরাসরি মৃত্যুর কারণ নয়। বরং এটি বিভিন্ন রোগ, যেমন – বিষণ্ণতা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, ওজন বৃদ্ধি এবং বিপাকীয় সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এই রোগগুলোই পরে জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
  • ঘুমের কারণে রোগের আগমন: অনেক সময় অতিরিক্ত ঘুম কিছু রোগকে আমন্ত্রণ জানায়। যেমন, অলস জীবনযাত্রা, স্থূলতা এবং ধূমপানের মতো অভ্যাসগুলো অতিরিক্ত ঘুমের প্রবণতা বাড়ায় এবং একই সাথে শরীরের অবস্থাও খারাপ করে।
  • লক্ষণ হিসেবে অতিরিক্ত ঘুম: যদি আপনি কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত ঘুমান, তাহলে এটি একটি সতর্ক সংকেত হতে পারে। স্লিপ অ্যাপনিয়া বা দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তিজনিত রোগের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে শরীর অতিরিক্ত বিশ্রামের জন্য ইঙ্গিত দিতে পারে, যা রোগের উপসর্গ হিসেবে প্রকাশ পায়।

অন্যদিকে, যারা প্রতিদিন ৭ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের ক্ষেত্রেও অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের মৃত্যুঝুঁকি ১৪% বেশি। তাই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য পরিমিত ঘুম, অর্থাৎ ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমই আদর্শ।

অতিরিক্ত ঘুমের কারণে হতে পারে এমন কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা:

অতিরিক্ত ঘুম শুধু ক্লান্তির লক্ষণ নয়, এটি শরীরের ভেতরে নানা ধরনের সমস্যার জন্ম দিতে পারে। এর ফলে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে, তার মধ্যে কয়েকটি হলো:

  1. ডায়াবেটিস: অতিরিক্ত ঘুম শরীরের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  2. হৃদরোগ: গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি ঘুম হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  3. ওজন বৃদ্ধি: অলস জীবনযাত্রা এবং অতিরিক্ত ঘুম বিপাক ক্রিয়াকে মন্থর করে দেয়, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়।
  4. বিষণ্ণতা: বিষণ্ণতা এবং অতিরিক্ত ঘুমের মধ্যে একটি চক্রাকার সম্পর্ক রয়েছে। অতিরিক্ত ঘুমালে বিষণ্ণতা বাড়তে পারে, আবার বিষণ্ণতার কারণেও অতিরিক্ত ঘুম আসতে পারে।

কীভাবে আপনার ঘুমের মান উন্নত করবেন?

আপনার ঘুমের পরিমাণ যদি বেশি হয়, তাহলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কিছু সহজ উপায় মেনে চললে আপনার ঘুমের মান উন্নত হতে পারে:

  • একটি নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিন তৈরি করুন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠুন। এতে আপনার শরীরের বায়োলজিক্যাল ঘড়ি ঠিক থাকবে।
  • ঘুমানোর আগে ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন: ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল, ল্যাপটপ বা টেলিভিশন দেখা বন্ধ করুন। এগুলোর নীল আলো আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
  • আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন: আপনার শোবার ঘরটি অন্ধকার, শান্ত এবং ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা করলে রাতে ভালো ঘুম হয়। তবে ঘুমানোর ঠিক আগে ভারী ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন।
  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস: ঘুমানোর আগে ভারী খাবার বা ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলুন।

যদি আপনার অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা চলতে থাকে, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি হয়তো কোনো অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কিনা তা নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারবেন।

           

©Author: TendingGB

           

Release date: 16 Sep 2025

Post a Comment

0 Comments